সাহারি (السَّحَرِى) (পাঠ ৯)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ইসলাম শিক্ষা ইবাদত | - | NCTB BOOK
86
86

'সাহারি' আরবি শব্দ। যা সাহারুন শব্দ থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। এর অর্থ ভোর, প্রভাত ইত্যাদি। রমযান মাসে রোযা পালনের উদ্দেশ্যে সুবহে সাদিকের পূর্বে যে খাবার খাওয়া হয়, তাকে সাহারি বলে। সাহারি খাওয়া সুন্নত। রাসুলুল্লাহ (স.) নিজে সাহারি খেয়েছেন এবং অন্যদেরও খাওয়ার জন্য তাগিদ করতেন। মহানবি (স.) বলেছেন, 'সাহারি খাওয়া বরকতের কাজ। তোমরা সাহারি খাও।' (বুখারি)। সুবহে সাদিকের আগেই সাহারি খাওয়া শেষ করতে হবে। কিন্তু এত আগে সাহারি খাওয়া উচিত নয় যে, খাওয়ার পর অনেক সময় বাকি থাকে। ফলে অনেকে বিশ্রামের জন্য বিছানায় যায় এবং ঘুমিয়ে পড়ে। এতে সালাত কাযা হয়ে যায়।

ইস্তার (الإفطار )
'ইস্তার' আরবি শব্দ। এর অর্থ ভঙ্গ করা। ইসলামি পরিভাষায় সূর্যাস্তের পর নিয়তের সাথে হালাল বস্তু পানাহারের মাধ্যমে রোযা ভঙ্গ করাকে ইস্তার বলে। ইস্তার করা সুন্নত। এতে অনেক সাওয়াব পাওয়া যায়। ইফতার করার সময় 'বিস্মিল্লাহ্' বলে শুরু করা এবং 'আলহামদুল্লিাহ্' বলে শেষ করা উত্তম। তবে নিম্নোক্ত দোয়াটিও পড়া যায়:

اللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَعَلَى رِزْقِكَ أَفْطَرْتُ -

অর্থ: 'হে আল্লাহ! আপনার জন্য সাওম পালন করেছি এবং আপনার দেওয়া রিজিক দ্বারাই ইফতার করলাম।' (আবু দাউদ)। নিজে ইস্তার করার সাথে সাথে অন্যকেও ইফতার করালে অনেক সাওয়াব পাওয়া যায়। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, 'যে ব্যক্তি কোনো রোযাদারকে ইফতার করাবে, সে রোযাদারের সমান সাওয়াব পাবে।' (তিরমিযি)। আমরা অধিক সাওয়াব ও আল্লাহর রহমত পাওয়ার আশায় নিজে ইফতার করব এবং অন্যকেও ইফতার করাব।

সাওম ভঙ্গের কারণ
যেসব কারণে সাওম ভঙ্গ হয় এবং একটির পরিবর্তে একটি সাওম পালন করা ফরজ হয়, তা নিম্নে বর্ণনা করা
হলো:
১. ভুলবশত কিছু খেয়ে ফেলার পর সাওম ভঙ্গ হয়েছে মনে করে ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করলে।
২. কুলি করার সময় অনিচ্ছায় পানি পেটে গেলে।
৩. সাওম পালনকারীকে জোর করে কেউ কিছু পানাহার করালে।
৪. ভুলবশত রাত এখনো বাকি আছে মনে করে সুবহে সাদিকের পর সাহারি খেলে।
৫. ইফতারের সময় হয়েছে মনে করে সূর্যাস্তের আগে ইস্তার করলে।
৬. ইচ্ছাকৃতভাবে মুখ ভর্তি বমি করলে।
৭. প্রশ্রাব-পায়খানার রাস্তার মাধ্যমে ওষুধ বা অন্য কিছু গ্রহণ করলে।

সাওম মাকরুহ হওয়ার কারণ
সাওম মাকরুহ হওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। নিম্নে কতিপয় কারণ উল্লেখ করা হলো-
১. অন্যের গিবত অর্থাৎ দোষত্রুটি বর্ণনা করলে।
২. মিথ্যা কথা বললে, অশ্লীল আচরণ বা গালমন্দ করলে।
৩. কুলি করার সময় গড়গড়া করলে। কারণ এতে গলার ভিতর পানি ঢুকে গিয়ে রোযা ভঙ্গের আশঙ্কা থাকে।
৪. যথাসময়ে ইফতার না করলে।
৫. গরমরোধে গায়ে ঠান্ডা কাপড় জড়িয়ে রাখলে বা বারবার কুলি করলে।

দলগত কাজ: শিক্ষার্থীরা সাহারি ও ইফতারের সময়সূচি ও দোয়া ছক আকারে লিখে শ্রেণিতে উপস্থাপন করবে।

সাওমের (রোযার) কাযা ও কাফ্ফারা ( قَضَاءُ الصَّوْمِ وَكَفَّارَتُهُ )

কাযা
কোনো কারণে অনিচ্ছায় যদি সাওম ভেঙে যায় কিংবা কোনো ওযরে তা পালন করা না হয়, তবে একটি সাওমের পরিবর্তে একটি সাওমই রাখতে হয়। একে কাযা সাওম বলে।

সাওম কাযা করার কারণসমূহ
১. সাওম পালনকারী রমযান মাসে অসুস্থ হয়ে পড়লে বা সফরে থাকলে অথবা অন্য কোনো ওযরের কারণে সাওম পালনে অপারগ হলে।
২. রাত মনে করে ভোরে পানাহার করলে। সন্ধ্যা হয়ে গেছে মনে করে সূর্যাস্তের পূর্বে ইফতার করলে।
৩. ইচ্ছাকৃতভাবে মুখভর্তি বমি করলে।
৪. জোরপূর্বক সাওম পালনকারীকে কেউ পানাহার করালে।
৫. কুলি করার সময় অনিচ্ছায় পানি পেটে গেলে।
৬. ভুলক্রমে কোনো কিছু খেতে শুরু করার পর সাওম নষ্ট হয়ে গেছে মনে করে পুনরায় খেলে।
৭. দাঁত হতে ছোলা পরিমাণ কোনো জিনিস বের করে খেলে।

উল্লিখিত অবস্থায় সাওম নষ্ট হলেও সারা দিন না খেয়ে থাকতে হয় এবং পরে কাযা করতে হয়।

কাফ্ফারা (الْكَفَّارَةُ)

ইচ্ছাকৃতভাবে সাওম পালন না করলে বা সাওম রেখে বিনা কারণে ভেঙে ফেললে কাযা এবং কাফ্ফারা উভয়ই ফরজ হবে।

সাওমের কাফ্ফারা নিম্নরূপ:
১. একাধারে দুই মাস সাওম পালন করা।
২. এতে অক্ষম হলে ৬০ জন মিসকিনকে পরিতৃপ্তির সাথে দুই বেলা খাওয়ানো অথবা
৩. একজন দাসকে স্বাধীনতা প্রদান করা।

একাধারে দুই মাস কাফফারার সাওম আদায়কালীন যদি মাসে দুই-একদিন বাদ পড়ে যায়, তবে পূর্বের সাওম বাতিল হয়ে যাবে। পুনরায় নতুন করে শুরু করে দুই মাস বিরতিহীনভাবে সাওম পালন করতে হবে।

দলগত কাজ: শিক্ষার্থীরা সাওম কাযা ও কাফফারার কারণ পৃথকভাবে পোস্টার পেপারে লিখে শ্রেণিতে উপস্থাপন করবে।
Content added By
Promotion